৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর অন্তত পাঁচটি ফোন কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে৷
এসব কথপোকথনগুলোতে দেখা যায় শেখ হাসিনা কখনো বরগুনা কখনো নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি কিংবা তার চেয়েও নিচের কাতারের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন৷
শেখ হাসিনার ফোনকল পেয়ে এসব নেতারাও নিজেদেরকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। যে কারণে উত্তেজনার বশে এসব টেলিফোন রেকর্ড নিজরাই সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের যে আওয়ামী লীগ কর্মীর সঙ্গে শেখ হাসিনাকে কথা বলতে শোনা গেছে, তিনিও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ একজন সমর্থক ৷
নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে বসবাস করেন এমন একজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে দলীয় কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না৷ নেতা-কর্মীদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেও অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়িয়ে চলছেন সিদ্দিকুর রহমান৷
যদিও বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন পিকনিক এবং সংস্কৃতি অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত তাকে দেখা যাচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের ওই নেতা।
সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সারির যেসব নেতারা ৫ই আগস্টের আগে দলীয় কর্মসূচি গুলোতে নেতৃত্ব দিতেন তাদেরকেও এখন দেখা যাচ্ছে না৷ যে কারণে শেখ হাসিনার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে তৃতীয়-চতুর্থ সারির নেতা-কর্মীরা৷
সবশেষ শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছাত্রলীগের সাবেক যে নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন তার নাম তানভীর কায়সার৷ তিনি ৫ বছর আগে ম্যাক্সিকো হয়ে সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন৷
বাংলাদেশে থাকাকালীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তানভীর তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারাই তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ এরপর থেকে তানভীর কায়সার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, পেশায় তিনি একজন ট্যাক্সি চালক৷
এ ছাড়া তানভীর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাকে দেখা যায় না৷ যে কারণেই শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীরের ফোনালাপ ফাঁসের পর খোদ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে ৷
আওয়ামী লীগের অনেকেই বলাবলি করছে তাহলে কি শেখ হাসিনার পাশে সুসময়ে সুবিধা নেয়া সেই নেতারা নেই? তা নাহলে শেখ হাসিনা কেন তানভীরকে ফোন করবে?
এ দিকে, যুক্তরাজ্য (বৃটেন) আওয়ামী লীগের অবস্থা আরও শোচনীয়৷ যুক্তরাজ্যে বরাবরই বিএনপির সাংগঠনিক ক্ষমতা আওয়ামী লীগের চেয়ে শক্তিশালী ছিলো৷
শেখ হাসিনার প্রায় প্রতিটি সফরেই আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে চড়াও হতে দেখা গেছে৷ সরকার পতনের পর লন্ডন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা আর প্রকট হয়ে উঠেছে৷
লন্ডনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েও নেতাকর্মীদের অভাবে তা আবার বাতিল করতে হয়েছে৷
অন্যদিকে, দেশের অভ্যন্তরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যেসব নেতারা গা ঢাকা দিয়ে আছেন তারাও পথ খুঁজছেন দেশ থেকে পালানোর৷ দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি৷ রাজনীতির এমন বাস্তবতায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা দিনকে দিন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ছে৷
বৃহষ্পতিবারের একটি ফোন রেকর্ডে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায় তিনি সীমান্তের খুব কাছেই আছেন, যেন "চট করে" দেশে ঢুকে পড়তে পারেন৷ অথচ এরইমধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে শেখ হাসিনা নানা ধরনের বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে আছেন৷
চাইলেই যে কেউ তার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে পারছেন না৷ যে কারণে দলীয় প্রধানের এরকম বক্তব্যেও খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাধারণ নেতাকর্মীরা৷ এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন এক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা৷
Post a Comment